১৬ ডিসেম্বর যশোরে কাজ শেষে চিন্তা করলাম সকালের ট্রেনে ঢাকা যাব। রেলস্টেশনে গিয়ে দেখি নোটিশ ঝোলানো, "২০/১২/১৭ এর আগে খুলনা-যশোর-ঢাকা এর কোন টিকেট নাই"। কি আর করার ট্রেন বাদ। বাসে যাব তা পরদিন দুপুর ১২ টার আগে কোন টিকিট নাই!! আর কি অবশেষে বেনাপোল থেকে আসা ঢাকার সোহাগের টিকিট কাটলাম। গাড়ি দুপুর একটায়। মোটামোটি ঠিক সময়ে পেয়ে গেলাম। উঠে বসতে গিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমার দেখা সোহাগ গাড়ির সবচেয়ে বাজে leg space!! যাহোক তাও সহ্য করে নিলাম,বাড়ি যাচ্ছি বলে কথা। ফেরিঘাটে পৌছলাম বিকাল সাড়ে চারটায়। ফেরিঘাটে পৌছলাম বলা ঠিক না। ফেরিঘাটে ঢুকার ৪ কিলো আগে পৌছলাম!! হ্যা, টানা ৪ কিলো জ্যাম! অগত্যা চুপচাপ বসে গান শোনা। মাঝে গাড়ির সুপার ভাইজার সাহেব সতর্ক করে গেলেন জানালা খোলা রেখে পাশে বসে ফোন না চালাতে,চুরির ভয় আছে। বলার আধা ঘন্টা খানেক হয় নি, হঠাৎ আমার পেছনে হুট করে এক চিৎকার!! পিচ্চি মেয়েটার হাত থেকে থাবা দিয়ে ফোন নিয়ে চোর পালিয়েছে!! আমার একেবারে পেছনের সিটে! পরে যা বুঝলাম তা হল টায়ারে পা দিয়ে উঠে খোলা জানালা আর পিচ্চির মোবাইলে ডুবে থাকার সুজোগটার পূর্ন ব্যবহার করেছেন চোর সাহেব!! যাহোক পিছে পিচ্চির কান্না আর সামনে কলকাতা ঢঙের বাংলা বলা হেডফোনের গানের ফাঁকেফাঁকে কানে আসছে। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা শেষে রাত ১০ টায়,হ্যা রাত ১০ টায় ফেরি পেলাম। ফেরিতে উঠেই আমি বাস থেকে নেমে গেলাম পদ্মার হাওয়া খেতে। রাত সোয়া দশটা,ফেরির ছাদে ঘন কুয়াশার ঝাপ্টা চশমার কাচ ঘোলা করে দিচ্ছে। ভালই লাগছে। কিচ্ছুক্ষণ পর চারদিকে দেখে মনে হল প্রায় চলে এসেছি। নিচে নামছি, হঠাৎ শুনি ইঞ্জিন বন্ধ! নিচে নেমে শুনি ফেরি মাটিতে ঠেকে গেছে সাথে ঘন কুয়াশায় কিছু দেখ যাচ্ছে না! আমি ভাবলাম কয়ক্ষন আর লাগবে। কিচ্ছুক্ষণ পর ঘন্টা বাজানো হল,আর দেখি ফেরির সব দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এবার বুঝলাম একটা সিরিয়াস অবস্থায় ফেসে গেছি! আমি বাইরে বের হলে দরকার না হলে মোবাইলে ইন্টারনেট চালাই না,এবার কিনলাম। Google map চালু করতেই বুঝলাম আজ ভাগ্য আমার সাথে নাই!! আমরা ঘাট থেকে ৫-৭ মিনিটের পথ দূরে!!
যাহোক কিছু করার নেই। সময় তখন সাড়ে ১০ টা। বাসে ফিরে দেখি সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে,কারণ দ্রুত ফেরি ছাড়ার কোন সম্ভাবনা নাই! বুঝলাম আজ রাতে আমার আর পৌছানো হচ্ছে না! আমারও একটা ঘুম দেয়া উচিত। তবে শত চেষ্টা করেও ঘুম আর আসে না! কি আর করার বাস থেকে নেমে ফেরি চক্কর কাটলাম কয়েকবার। আর ছাদের সেই কুয়াশার ঝাপ্টা.....।ফেরি চক্কর কাটা থামিয়ে বাসে ফিরলাম ঠান্ডা লাগার ভয়ে। আরো একটা ভয় ছিল বটে, কোথাও বসে ঘুমিয়ে পড়লে বাস মিসের ভাল সম্ভাবনা আছে! সব ভয় মিলে বাসে ফেরত নিয়ে গেল আর কি। শেষে বাজে leg space এ খুব কষ্টে সষ্টে পা চাপিয়ে হালকা একটা ঘুম দিলাম। ঘুম ভাংল যান্ত্রিক শব্দে। সময় তখন সকাল ৪ টা ৪০। কুয়াশা কেটে গেছে। কিচ্ছুক্ষন তীব্র ইঞ্জিনের চালনে আমরা বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেলাম। আর হ্যা আসলেই ৫ মিনিট লাগল পাড়ে পৌছাতে! এই তিন মিনিট এর জন্যে আমরা ৬ ঘন্টা বন্দী ছিলাম!! বাস যখন পাটুরিয়া ছেড়ে বেড়িতে যাচ্ছে তখন চিন্তা করলাম আসলেই পদ্মা, পদ্মাই! এই পদ্মা পার হতে পাক্কা ১২ ঘন্টা লাগল! অবস্য বিনা পয়সায় পদ্মা নদীর মাঝে রাত্রি যাপন করলাম,এই অভিজ্ঞতাও কম কই! ফেরিঘাট ছাড়ার পর আর তেমন সময় লাগে নি। সাড়ে সাতটার দিকে গাবতলি নামলাম। বাসায় পৌছাতে পৌছাতে সোয়া আটটা। আর হ্যা এটা বলা হয় নি,যশোর থেকে সকাল সকাল বাসের টিকটের উদ্দেশ্যে বের হওয়ায় কিছু খাওয়া হয়নি। ঝালমুড়ি,চিপ্স... এগুলা খেয়ে প্রায় সারাটা পথ ছিলাম! বাসায় পৌছে তাই খাওয়াটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাড়াল আর কি। খেতে বসে আম্মুকে সব গল্প শোনাচ্ছি।
আম্মু: এত journey করতে হয়না বুচ্ছিশ। একটু কমা।
আমি: হু..
আম্মু: খালি হু?
আমি: আর কি বলব, আগামী সপ্তাহে যশোর গণিত উৎসবে যাব,তারপর খাগড়াছড়ি যাবার ইচ্ছা আছে,জানুয়ারির ৫ তারিখ আবার কলেজ reunion!!
আম্মু: তোকে কিছু বলে লাভ নাই!!
খাওয়া শেষে মোবাইল গুতাতে গুতাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নাই। উঠে ইচ্ছা হল কিছু লিখব তাই
Comments
Post a Comment